![]() |
শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহল থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি পেতে চাইলে ডুয়ার্সের নামটি প্রথমেই মনে আসে। ঘন সবুজ বন, নদীর কলকল ধ্বনি আর অজস্র বন্যপ্রাণী যেন এক টুকরো স্বর্গের মতো। এবারের গন্তব্য বনবিলাস রিসোর্ট, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এক অপরূপ অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। চলুন, শুরু করি কলকাতা থেকে ডুয়ার্সের এই আকর্ষণীয় ভ্রমণ।
ভ্রমণের শুরুঃ কলকাতা থেকে ডুয়ার্স
ভ্রমণ শুরু হলো শিয়ালদহ স্টেশন থেকে, রাতের ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) এর উদ্দেশ্যে। ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন স্বপ্নের জগতে প্রবেশের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ভোরে যখন NJP পৌঁছালাম, তখন আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। স্টেশন থেকে একটি প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে যাত্রা শুরু করলাম ডুয়ার্সের উদ্দেশ্যে।
ডুয়ার্সের পথে পথেঃ
রাস্তার দু’পাশে চা বাগানের সবুজ চাদর, মাঝে মাঝে পাখির দল আর বুনো ফুলের গন্ধ মেশানো হাওয়া, যেন প্রকৃতি তার হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। মালবাজার, চালসা, লাটাগুড়ি—প্রতিটি জায়গা যেন নিজস্ব রূপকথার গল্প বলে চলে।
বনবিলাস রিসোর্টঃ
বনবিলাস রিসোর্টে পৌঁছানোর পরই বোঝা গেল কেন এটিকে এত সুন্দর বলা হয়। রিসোর্টটি চারপাশে রয়েছে ফুলের বাগান এবং ছোট ছোট কটেজ, সবুজের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রিসোর্টের সামনে বসার জায়গা থেকে দেখা যায় সূর্যাস্তের দৃশ্য, যা মনে আলাদা এক প্রশান্তি এনে দেয়।
প্রথম দিনঃ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া
রিসোর্টে চেক-ইন করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বেরিয়ে পড়লাম রিসোর্টের চারপাশে ঘুরতে। রিসোর্টের ভেতরেই ছোট্ট একটা সুমিং পুল আছে, আর আদিবাসীদের নাচের সাথে আছে Bonfires ব্যাবস্থা। এছাড়াও প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর পাখির ডাক যেন এক অন্যরকম অনুভূতি এনে দিল।
দ্বিতীয় দিনঃ চা বাগান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
দ্বিতীয় দিনের পরিকল্পনা ছিল চা বাগান ভ্রমণ এবং গরুমারা জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন। সকালের জলখাবার পর শুরু হলো ডুয়ার্সের বিখ্যাত চা বাগান ঘোরাঘুরি। কাঁচা চায়ের গন্ধ, পাতা তোলার প্রক্রিয়া দেখা—সবকিছুই যেন নতুন অভিজ্ঞতা। তারপর গেলাম গরুমারা জাতীয় উদ্যানে। এখানে জিপ সাফারি করে দেখা মিলল গণ্ডার, হরিণ, এবং বিভিন্ন রকমের পাখির। ভাগ্য ভালো থাকলে হাতির দলেরও দেখা মেলে।
তৃতীয় দিনঃ নদীর ধারে পিকনিক আর রিসোর্টে ফেরা
তৃতীয় দিনটির বেশিরভাগ সময় কেটেছে মূর্তি নদীর ধারে। নদীর ধারে পিকনিক করে, পাথরের ওপর বসে হিমশীতল জলে পা ভিজিয়ে সময়টা ছিল দারুণ। বিকেলে ফিরে এলাম বনবিলাসে। রিসোর্টে বসেই কফির কাপ হাতে আর সন্ধ্যের মজাদার জলখাবার খেতে খেতে পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।
ফেরার দিনঃ মনে গেঁথে যাওয়া স্মৃতি
শেষ দিনটি ছিল ফেরার দিন। প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি করে আবার NJP রওনা দিলাম। যাত্রাপথে পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য যেন আরেকবার বিদায় জানাতে এল। কলকাতার ট্রেনে উঠে মনে হচ্ছিল, এই কয়েকদিনের ডুয়ার্সের প্রতিটি মুহূর্ত যেন অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।
শেষ কথাঃ
ডুয়ার্স ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য। বনবিলাস রিসোর্টে থাকাটা যেন প্রকৃতির একেবারে কাছাকাছি থাকার মতো। যদি আপনি প্রকৃতি ভালোবাসেন, তাহলে এই রিসোর্ট আপনার জন্য সেরা গন্তব্য। কলকাতা থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়, আর যা পাওয়া যায় তা নিঃসন্দেহে অমূল্য।
পরবর্তী ছুটিতে, ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ডুয়ার্সের দিকে। প্রকৃতি তার মায়াবী হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
আরও কী অপেক্ষা করছে?
বলুন তো…..
আসুন, খুঁজে নিন প্রকৃতির স্নেহমাখা কোলে বনবিলাস রিসোর্টে!
0 Comments